জবানবন্দি

একজন কওমী মাদ্রাসার ছাত্রের জবানবন্দি

খুব কষ্ট পাই যখন দেখি আলেম ঊলামাদের নামে কিছু ভন্ড আলেম কিছু ভূল মাসলা, ফতুয়া দিয়ে থাকে। জানিনা তারা কোথায় এসব মাসায়েল খুঁজে পায়। তবে একটি সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের দেশে যাদের মাদ্রাসায় পড়ানো হয়, তাদের ৯৫% হয় গরীব আর মধ্যবিত্ত পরিবারের, যার কারণে নিজে কিতাব কিনে পড়ার সামর্থ্য তাদের না থাকায় মূল বিষয়ে তারা বেশী জানতে পারে না, উদাহারন না দিলে বুঝতে সমস্যা হতে পারে তাই বুঝিয়ে বলছি

>> যারা দাওরায় পরে তাদের মেয়াদ ১ বছর, এই ১ বছরে তাদের হাদিছের ৮টি কিতাব পড়ানো হয়, এই ৮টি কিতাবে প্রায় ৪০০০০ হাদিছ আছে, তাহলে গড়ে(৩১৩ দিনে, কারণ শুক্রবার ক্লাশ হয় না) প্রায় ৩১৭টি করে হাদিছ তাদের পড়ানো হয়, তাহলে দেখুন কতটি হাদিছ মনে রাখা সম্ভব আর কিইবা বুঝা সম্ভব?

>> আবার সাথে রয়েছে হাদিছের শরাহ, কিছু হাদিছ আছে ব্যাখ্যা ছাড়া বুঝা যাবে না, সেক্ষেত্রে পড়তে হবে হাদিছের ব্যাখ্যাগ্রন্থ, অরে বাব্বাঃ ব্যাখ্যা গ্রন্থের নাম বলে কি হবে, শুধু একটির নাম বলে আমাদের সবার কাছে পরিচিত যেসব হাদিছগ্রন্থ আছে তার মধ্য একটি বুখারী শরীফঃ শুধু এরই ৮৬টি ব্যাখ্যাগ্রন্থ আছে, তার মধ্যে ২০-৩০টি হাতে গুনা বড় বড় মাদ্রাসায় পাওয়া যায়, তবে বেশী প্রচলীত মাত্র কয়েকটি আমাদের উপমাহাদেশে পড়ানো হয়, যেমন ফাথুল বারী, ফায়যুল বারী, ফাযলুল বারি, কাশফুল বারী, আয়নুল বারী, উমদাতুল কারী, শরহে কিরমানী, ইত্যাদি,তবে এর মধ্যে বেশী পড়ানো হয় ফাথুল বারী আর উমদাতুল কারী। এই উমদাতুল কারী ৩০ খন্ডঃ মোট পৃঃ প্রায় ১৮-২০ হাজার, বুঝেন তাহলে কিভাবে ১ বছরে ভালভাবে বুঝা সম্ভব?

>> মাসয়ালা কিতাব পড়ানো হয়, হিদায়া সাথে তার শরাহ বেকায়া, নায়লুল আওতার, সাথে কুনিয়া, বাহরুল রায়েক, ফাতহুল কাদির, বাদায়েয়ুস সানায়ে ইত্যাদি পাশাপাশি দেখতে হয়, তাহলে বলুন কিভাবে সম্ভবপর হয় এত তাড়াতাড়ি আয়ত্তে রাখা বা বুঝা। এই কারণে হাতেগুনা কয়েকজন সহজে আয়ত্ত্ব করতে পারেন, তবে যারা আয়ত্ত্বে আনতে পারেন তাদের বেশীরভাগই কঠোর পরিশ্রমের বলেই পেরেছেন। তবে আমার জানামতে সবাই নিসাবের পাশাপাশি আলাদাভাবে আয়ত্ত্বে এনেছেন, ব্যক্তিগতভাবে পড়েছেন

>> আর যারা ইফতা(মূফতী) পড়েন, তাদের কথা আর কি বলব..প্রায় ৮০ থেকে ৯৬টা কিতাব তাদের পড়তে হয় বা ধারণা নিতে হয় মাত্র ২ বছরে ( তবে কোথাও কোথাও ১ বছর), প্রতিটি কিতাবের তো কয়েক খন্ড এভাবে যদি ২০ টি ও পড়ে তাহলে কতদিন লাগার কথা বুঝুন।

>> এখন দেখার বিষয় হল সাধারণ নিসাব অনুযায়ী তাদের পড়ালেখা শেষ করা হয়, যারা বুঝেছেন বা আয়ত্ত্বে আনতে পেরেছেন তারাত আলহামদুলিল্লাহ পেরেছেন, তবে তাদের মধ্যে আবার অনেকে লোভে চলে যান ভূল পথে, সাথী হন শয়তানের পথের।

>> আর যারা ১ বছরে আয়ত্ত্বে আনতে পারেন নি, তারা নিজের টাকা দিয়ে যে কিতাব কিনে নিজে পড়বে সেই সামর্থ্য না থাকায় তিনি নিজে কি মাসলা দিবেন বা ফাতয়া দিবেন বলতে পারেন, তখনিই প্রমাণ মেলে কম জ্ঞানের, তার ই বা কি দোষ, সামর্থ্য না থাকায় কিনতে পারেন নি অতি প্রয়োজনীয় কিতাব, জানতে পারেন নি গবীরভাবে, বুঝতে পারেন নি ভাল, কি বলবেন কারণ তিনি ছিলেন গরীব বা মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন, তখন তার প্রয়োজন হয় চাকরীর, পেয়ে যান কোনমতে ইমামতির পদ, চাকরী বাচাঁতে বলতে হয় অনেক কথা, তখন বেশীরভাগ আলেমই মসজিদ কমিটির কথায় উঠেন আর বসেন, তবে কিছু আলহামদুলিল্লাহ তারা থাকেন অঠল, কোন মিথ্যার সাথে বা কাউকে করে না পরোরা, চলেন নিজের গতিতে ,ভয় করে একমাত্র আল্লাহকে,তবে উনাদের সংখ্যা খুব কম আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে।

>> তাহলে বলেনতো, কিভাবে তারা আমাদের ভাল করে বুঝাবেন বা ঠিক মত কথা বলবেন? তবে হা অনেক আলাম আছেন যারা আলহামদুলিল্লাহ খুব ভাল কথা বলেন বুঝাতে পারেন, তবে তারা বেশীরভাগই ধণী পরিবারের সন্তান
তাই আমি যতটুকু বুঝি, আমাদের উচিত যাদের মেধা ভাল এবং টাকা পয়সা যাদের আছে এরকম পরিবারের ছেলেদের মাদ্রাসায় দেয়া, তার মানে এই নয় যে গরীব বা মধ্যবিত্তদের কি দিব না। তাদের অনেকেই অনেকেই মেধাবী হয়, ভাল আলেম হয়, তবে সেটা খুব কম। 

আশা করি আমরা সবাই কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছি আমাদের কিছু ব্যর্থতার কারণ, তবে এছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে সেগুলো বলা উদ্দেশ্য নয় বিধায় শুধু এই বিষয়টি বলা।

>> একটা বিষয় পরিলক্ষিত হাদিস গুলোর ব্যাখ্যা পড়ান হই শুধু মাত্র মাযহাবের জন্য এবং কিছু নিয়ম বাতলায়ে দেওয়া হই  এইভাবে হলে তুমি হাদিস নিবে

সংকলিত --